বজ্রপাতের সময় কি করবেন?
কালবৈশাখীর ঝড় বা বজ্রপাতে প্রতিবছর প্রাণ
হারাচ্ছেন অনেকেই। বিশেষ করে আমাদের
দেশে বৈশাখ মাসে বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়
ফলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এ থেকে রক্ষা পেতে করণীয় দিকগুলো
আলোচনা করা হলো-
বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ
বজ্রপাত হওয়ার আগ মুহূর্তে কয়েকটি
লক্ষণে কোথায় তা পড়বে তা বোঝা
যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে
আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে
বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এ সময় আশপাশের ধাতব
পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ
পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’শব্দ পাওয়ার কথা জানান।
আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন
তাহলে বজ্রপাত হবে এমন প্রস্তুতি নিন।
জানালা থেকে দূরে থাকা
বজ্রপাতের সময় ঘরের জানালার কাছাকাছি থাকা
যাবে না। জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতর
থাকতে হবে।
ধাতব বস্তু স্পর্শ না করা
বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির
রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। এমনকি
ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করা যাবে না।
খোলা বা উঁচু স্থান থেকে দূরে থাকা
ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো
অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না।
পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নেয়াই সুরক্ষার কাজ
হবে।
উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকা
কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের
খুঁটিতে বজ্রপাতের হওয়ার আশঙ্কা বেশি
থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেয়া যাবে না।
যেমন- খোলা স্থানে বিচ্ছিন্ন একটি যাত্রী
ছাউনি, তালগাছ বা বড় গাছ ইত্যাদি।
বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত
থাকা
বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব
যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে
হবে। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরা
যাবে না। বজ্রপাতের আভাষ পেলে প্লাগ
খুলে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন
করতে হবে। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ
আগেই খুলে রাখতে হবে।
গাড়ির ভেতর থাকলে
বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে
কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয়
নেয়া যেতে পারে। গাড়ির ভেতরের ধাতব
বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
গগণচুম্বী স্থান থেকে নিজেকে
সরাতে হবে
এমন কোনো স্থানে যাওয়া যাবে না। যে
স্থানে নিজেই ভৌগলিক সীমার সবকিছুর
উপরে। মানে আপনিই সবচেয়ে উঁচু। এ সময়
ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে
যেতে হবে। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু কোনো
স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে
যেতে হবে।
পানি থেকে দূরে থাকা
বজ্রপাতের সময় নদী, জলাশয় বা জলাবদ্ধ স্থান
থেকে সরে যেতে হবে। পানি বিদ্যুৎ
পরিবাহী তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
পরস্পর দূরে থাকতে হবে
বজ্রপাতে সময় কয়েকজন জড়ো হওয়া
অবস্থায় থাকা যাবে না। ৫০ থেকে ১০০ ফুট
দূরে সরে যেতে হবে। কোনো
বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না
থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে
আলাদা আলাদা কক্ষে যাওয়া যেতে পারে।
নিচু হয়ে বসা
যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে কানে
আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে চোখ বন্ধ
রাখতে হবে। কিন্তু এ সময় মাটিয়ে শুয়ে পড়া
যাবে না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট
হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।
রবারের বুট পরিধান
বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি
পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ
অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।
বাড়ি সুরক্ষিত করতে হবে
বজ্রপাত থেকে বাড়িকে নিরাপদ রাখতে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য
আর্থিং সংযুক্ত রড বাড়িতে স্থাপন করতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ
নিতে হবে। ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের
সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
বজ্রপাতে আহত হলে
বজ্রপাতে আহত কাউকে বৈদ্যুতিক শকে
আহতদের মতোই চিকিৎসা করতে হবে। দ্রুত
চিকিৎসককে ডাকতে হবে। হাসপাতালে নিতে
হবে। একই সঙ্গে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস
ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে
যেতে হবে। তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক
প্রশিক্ষণ জরুরি। যা সহজেই জেনে নেয়া
যেতে পারে।
|